ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম 2024

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম 2024

আপনি কি ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম কি জানতে চান? তাহলে লেখাটি একটু সময় নিয়ে পড়ুন। আশা করি লেখাটি পড়ার দ্বারা আপনি সহজেই ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম 2024 সম্পর্কে অবগত হবেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এনআইডি কেবল পরিচয়পত্র হিসেবেই নয়, ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্যও অপরিহার্য। কর্মসংস্থান, ঠিকানা পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় আমাদের ভোটার এলাকা পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়।

আর অনলাইনে NID-এর ঠিকানা পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও, ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন অফিসের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে জমা দিতে হয়। তাই এই আর্টিকেলে, আমরা আপনাকে NID-এ ভোটার এলাকা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধাপে ধাপে আলোচনা করবো।

আরও পড়ুন- ভোটার স্লিপ দিয়ে আইডি কার্ড ডাউনলোড

কখন ভোটার এলাকা পরিবর্তন করবেন?

জীবনে নানা কারণে আমাদের ঠিকানা পরিবর্তন হতে পারে। কর্মসংস্থান, বিয়ে বা অন্য কোন কারণে আমরা নতুন এলাকায় বসবাস শুরু করি। কিন্তু আপনার ঠিকানা পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনার ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভোটার এলাকা আপনার ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অধিকার নির্ধারণ করে।

কিন্তুু অনেকেই জানেন না যে কিভাবে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে হয়। কারণ অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা পরিবর্তন করা সম্ভব হলেও, ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য নির্দিষ্ট পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে। আর সেই পদক্ষেপ গুলো নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কি কি লাগে?

নতুন এলাকায় বসবাস শুরু করলে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আপনার ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য সঠিক ভোটার তালিকাভুক্ত থাকা আবশ্যক।

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য আপনার যা যা লাগবে

  • NID Form 13: নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত এই ফরমটি পূরণ করে জমা দিতে হবে।
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি: আপনার NID-এর স্পষ্ট ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
  • নতুন এলাকার নাগরিকত্ব সনদ: যে এলাকায় আপনি স্থানান্তরিত হচ্ছেন সেই এলাকার নাগরিক হিসেবে আপনার সনদপত্র।
  • বিদ্যুৎ/পানি বিল/ট্যাক্স রশিদ/বাড়ি ভাড়ার প্রমাণপত্র: নতুন এলাকায় আপনার বসবাসের প্রমাণ হিসেবে এই কাগজপত্রের যে কোনো একটি জমা দিতে হবে।
  • ফরম-১৩ এর শনাক্তকারী: আপনার নতুন এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর/চেয়ারম্যানকে শনাক্তকারী হিসেবে ফরম-১৩ এর ২য় পৃষ্ঠায় তাদের NID নম্বরসহ নাম, স্বাক্ষর ও সিল দিতে হবে।

বর্তমান সময়ে আপনারা যারা ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে চাইবেন তাদের উপরোক্ত ডকুমেন্টস গুলোর প্রয়োজন হবে। তাই ভোটার এলাকা পরিবর্তন আবেদন করার আগে আপনি এই ডকুমেন্টস গুলো সংগ্রহ করে রাখবেন।  

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম

নির্বাচনে অংশগ্রহণ আমাদের সকলের নাগরিক কর্তব্য। কিন্তু ঠিকানা পরিবর্তনের পর আপনার ভোটার এলাকাও পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, আপনি যে এলাকায় বসবাস করেন, সেই এলাকার নির্বাচনে আপনার ভোটদানের অধিকার রয়েছে।

আর বর্তমান সময়ে আপনি যেসব নিয়ম ফলো করার মাধ্যমে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে পারবেন সেগুলো নিচে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দেওয়া হলো। আপনি যদি নিচের পদ্ধতি গুলো সঠিক ভাবে ফলো করতে পারেন তাহলে আপনি খুব সহজ ভাবে আপনার ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে পারবেন। 

প্রথম ধাপ: ফরম ডাউনলোড ও পূরণ

সবার প্রথমে আপনাকে NID Form 13 ডাউনলোড করতে হবে। আর আপনি চাইলে নিচের লিংক থেকে সরাসরি ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম ১৩ ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

ডাউনলোড করা শেষ হলে আপনাকে সেই ফরমটি প্রিন্ট করতে হবে। তারপর আপনাকে আপনার সকল প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো উক্ত ফরমে দিতে হবে। মনে রাখবেন, এই ফরমে আপনার নতুন ঠিকানা সঠিক ভাবে লিখবেন। কারন, ভুল তথ্য প্রদানের ফলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই এখানে দেওয়া তথ্য গুলো যেন ভুল না হয় সেদিকে যথেস্ট খেয়াল রাখবেন।

দ্বিতীয় ধাপ: কাগজপত্র সংগ্রহ

NID Form 13 ডাউনলোড করার পর সেই ফরমে আপনার যাবতীয় তথ্য প্রদান করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে এবার উক্ত ডকুমেন্টস গুলো সংগ্রহ করতে হবে। যেমন, 

বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ

  • বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস বিল: এই বিল গুলো সাম্প্রতিক ঠিকানা পরিবর্তনের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
  • বাড়ি ভাড়ার রশিদ: আপনি যদি ভাড়া থাকেন, তাহলে ভাড়ার রশিদ আপনার বর্তমান ঠিকানা প্রমাণ করার জন্য দিতে পারবেন।

নতুন ঠিকানার প্রমাণ

  • নতুন ঠিকানার জন্যও বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস বিল বা বাড়ি ভাড়ার রশিদ ব্যবহার করতে পারবেন।
  • আপনার নতুন ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে মৌজা/মহল্লার সার্টিফিকেট, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট বা অন্য কোনো সরকারি দলিল ব্যবহার করতে পারবেন।

তৃতীয় ধাপ: আবেদন জমা

এই ধাপে, আপনাকে NID Form 13, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আবেদন ফি সহ আপনার বর্তমান ভোটার এলাকার উপজেলা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। তারপর নির্ধারিত আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে। তবে ফি পরিশোধের বিষয়ে অফিসের কর্মকর্তারা আপনাকে সহায়তা করবেন।

চতুর্থ ধাপ: অনুমোদন ও ফলাফল

আপনার আবেদন পর্যালোচনা করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় নিবে। যদি আপনার আবেদন সঠিকভাবে পূরণ করা হয় এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দেওয়া হয়, তাহলে আবেদন অনুমোদন করা হবে। আর আপনার আবেদন অনুমোদন হলে, আপনার নাম নতুন এলাকার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

তবে অনেকেই ভাবেন যে, ভোটার এলাকা পরিবর্তনের পর তাদের নতুন ঠিকানা যুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) দেওয়া হবে। কিন্তু এই সম্পূর্ণ একটি ভুল ধারণা। কারণ ভোটার এলাকা পরিবর্তনের সাথে সাথে NID-তে ঠিকানা আপডেট হয় না। 

কারণ ভোটার তালিকা এবং NID কার্ড দুটি ভিন্ন ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশন (EC) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, NID কার্ড ইলেকশন কমিশন (EC) এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) দ্বারা যৌথভাবে পরিচালিত হয়।

তাই যদি আপনার নতুন ঠিকানা যুক্ত NID প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনাকে NID রিইস্যুর আবেদন করতে হবে। NID রিইস্যুর করার জন্য নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফি কত টাকা?

কিছু ক্ষেত্রে, আমাদের ভোটার এলাকা পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, চাকরি বা ব্যবসার কারণে নতুন এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস স্থাপন করলে, বিয়ের পর স্বামীর ঠিকানায় স্থানান্তরিত হলে, অথবা পূর্বের ঠিকানায় আর বসবাস না করলে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা জরুরি।

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য বর্তমানে ভ্যাটসহ ২৩০ টাকা ফি ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০ টাকা মূল ফি এবং ৩০ টাকা ভ্যাট। বিকাশ, রকেট অথবা অন্য যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে সহজেই এই ফি জমা দেওয়া যায়।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কতদিন সময় লাগে?

নতুন ঠিকানায় স্থানান্তরিত হলে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভোটার তালিকায় আপনার নাম আপনার বর্তমান ঠিকানার সাথে যুক্ত থাকা প্রয়োজন। ভোটার এলাকা পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক ভাবে সহজ, তবে কত সময় লাগবে তা নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর।

সাধারণত, ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট এ প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, আবেদন জমা দেওয়ার পর নির্বাচন অফিস ৭ দিনের মধ্যে তা যাচাই করে। যদি আবেদনটি সঠিকভাবে পূরণ করা হয় এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়, তাহলে 15 দিনের মধ্যে ভোটার তালিকায় আপনার নাম আপডেট করা হবে।

তবে কোনভাবেই ভোটার এলাকা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ৩০ দিনের বেশি সময় প্রয়োজন হয়না। কিন্তুু যদি আপনার আবেদন করার পর অনুমোদন পেতে ৩০ দিনের বেশি সময় লাগে, তাহলে আপনাকে নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা

প্রিয় পাঠক, কিভাবে আপনি আপনার ভোটার এলাকা পরিবর্তন করবেন সেই ধাপ গুলো আজকের আর্টিকেলে দেখানো হয়েছে। আশা করি, এই পদ্ধতি গুলোর মাধ্যমে আপনি খুব সহজে আপনার ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে এরপরও যদি আপনার কোনো সমস্যা হয় তাহলে নিচে কমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *