ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম ২০২৪

আপনি যদি ১৬ বছরের বেশি বয়সী হয়ে থাকেন, তাহলে নিজে নিজেই অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

একটি দেশের নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সকল সরকারি সেবা ভোগ করতে এবং বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করার জন্য ভোটার আইডি কার্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অনেক। বর্তমানে নতুন ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন করলে, বাড়তি ফি দিতে হয়। কিন্তু অনলাইনে আপনি নিজে নিজে আবেদন করলে বিনা খরচেই নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে পারবেন। 

নতুন ভোটারের জন্য আবেদনকারী প্রার্থীকে অবশ্যই- 

  • বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
  • সর্বনিম্ন ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সী হতে হবে।
  • পূর্বে জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন হয়নি এমন ব্যক্তি।

এসকল যোগ্যতা পূরণ করলে একজন ব্যক্তি অনলাইনে বা সরাসরি নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়মানুসারে আবেদন করতে পারবে। এবার বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি জেনে নেওয়া যাক।

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

নতুন ভোটার নিবন্ধন আবেদন করার জন্য https://services.nidw.gov.bd/ ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। তারপর ‘আবেদন করুন’ অপশনে গিয়ে অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করুন। তারপর প্রোফাইল অপশনে গিয়ে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য ও ঠিকানা পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজাদি জমা দিয়ে আবেদন সাবমিট করুন। এবার আবেদন কপি প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিন।

আবেদনের তথ্য যাচাইয়ের পর নির্বাচন অফিসে বায়োমেট্রিকের জন্য ডাকা হলে ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও চোখের রেটিনা স্ক্যান করবে। এসকল তথ্য Higher Authority (কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন) – তে পাঠানো হলে ১৫ দিনের মধ্যে আপনার এনআইডি কার্ডের অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে পারবেন।

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে

ভোটার আইডি কার্ড আমাদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি। তাই ভোটার নিবন্ধন করার সময় কিছু প্রমানবাচক কাগজপত্র ও তথ্যাদি প্রয়োজন হবে। এবার সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ

  • একটি অনলাইন জন্ম সনদ।
  • আবেদনকারীর বাবা, মা, স্বামী/ স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
  • PSC/ JSC/ SSC বা সমমান পরীক্ষার সার্টিফিকেট। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করতে পারেন। 
  • বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি বি লের কপি বা কর পরিশোধের রশিদ।
  • নতুন ভোটার হওয়ার অঙ্গীকারনামা।
  • রক্তের গ্রুপ টেস্টের রিপোর্ট।
  • পেশার প্রমানপত্র হিসেবে কর্মক্ষেত্রের কোন প্রত্যয়ন কিংবা এমপ্লয়ার আইডি (Employer ID)।
  • অনলাইনে আবেদন করার পর আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি।

এছাড়া উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে অন্য কোন ডকুমেন্টস চেয়ে থাকলে তার কপি।

অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

আপনি যদি অনলাইনের মাধ্যমে নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে চান, তাহলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হবে। নিচে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরন করার বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি তুলে ধরা হলোঃ 

ধাপ ১: নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের আবেদন ফরমে সরাসরি ভিজিট করতে services.nidw.gov.bd – এই লিংকে ক্লিক করুন। এবার মূল পেজটি ওপেন হলে আবেদন করুন লেখাতে ক্লিক করুন।

ধাপ ২: অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করুন

NIDW ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করার জন্য নিজের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

(১) অ্যাকাউন্টের তথ্য প্রদান

  • ইংরেজিতে আপনার সম্পূর্ণ নাম লিখুন।
  • জন্ম তারিখ পূরণ করুন (দিন/ মাস/ বছর- ফরম্যাটে।
  • ক্যাপচা পূরণ করুন।

এবার ‘বহাল’ বাটনে ক্লিক করুন।

(২) মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই

আপনার হাতে থাকা একটি মোবাইল নাম্বার লিখুন। তারপর ‘বার্তা পাঠান’ বাটনে ক্লিক করুন। আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে ৬ সংখ্যার একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে। পরবর্তী পেজে সেই কোডটি লিখে ‘বহাল’ বাটনে ক্লিক করুন।

(৩) ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড প্রদান

এবার একটি ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড লিখুন। তারপর পুনরায় পাসওয়ার্ড লিখে কনফার্ম করুন। তারপর বহাল বাটনে ক্লিক করলেই অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।

ধাপ ৩: প্রোফাইল সম্পাদনা

এবার NIDW ওয়েবসাইটে আপনার একটি ড্যাশবোর্ড ওপেন হবে। এখান থেকে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। এর জন্য নিচের ছবিতে দেখানো’প্রোফাইল’ অপশনে ক্লিক করুন।

এবার এনআইডি নিবন্ধনকারীর জন্য একটি বিস্তারিত প্রোফাইল দেখতে পাবেন। এখানে আপনার-

  • ব্যক্তিগত তথ্য;
  • অন্যান্য তথ্য (শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ইত্যাদি) তথ্য;
  • এবং বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য পূরণ করতে হবে।

তথ্য পূরণের জন্য উপরের ডান পাশের ‘এডিট’ অপশনে ক্লিক করুন। তারপর প্রতিটি তথ্য পূরণের জন্য আলাদা আলাদা ঘর আসবে।

ধাপ ৪: ব্যক্তিগত তথ্যপূরণ

নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে আবেদনকারীকে নিজের ব্যক্তিগত সকল তথ্য পূরণ করতে হবে। যেমন:

(১) আবেদনকারীর তথ্য পূরণ 

  • বাংলায় আবেদনকারীর সম্পূর্ণ নাম;
  • জন্ম নিবন্ধন নম্বর;
  • লিঙ্গ;
  • রক্তের গ্রুপ;
  • জন্মস্থান;
  • জাতীয়তা ইত্যাদি তথ্য পূরণ করতে হবে। 

(২) পিতার মাতার তথ্য পূরণ 

  • পিতার নাম বাংলা ও ইংরেজিতে।
  • পিতার এনআইডি নাম্বার (ঐচ্ছিক)
  • পিতার ভোটার নাম্বার (ঐচ্ছিক)
  • মৃত্যুর সন (মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)

আবেদনকারীর পিতা মৃত্যুবরণ করলে, পিতার তথ্য অপশনের ডান পাশের ‘মৃত’ লেখায় ক্লিক করুন। তারপর মৃত্যুর সন পূরণ করুন। 

পিতার তথ্যের অনুরূপভাবে আবেদনকারীর মাতার তথ্য পূরণ করুন।

(৩) বড় ভাই/ বোনের তথ্য পূরণ 

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য অভিভাবকের তথ্য হিসেবে আবেদনকারীর বড় ভাই/ বড় বোনের নাম বাংলায় ও এনআইডি নম্বর লিখুন। এই ধাপটি অপশনাল।

(৪) বৈবাহিক তথ্য পূরণ 

এবার আপনার ‘বৈবাহিক অবস্থা’ অপশনের ডানপাশের ড্রপডাউন মেন্যুতে ক্লিক করে আপনি বিবাহিত, অবিবাহিত থেকে একটি তথ্য সিলেক্ট করুন।

বিবাহিত হলে-

  • স্বামী/স্ত্রীর নাম,
  • স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি নম্বর লিখুন।

স্বামী/স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলে মৃত্যুর সন লিখুন। এখানে, ধারাবাহিকভাবে ৪ জন চারজনের তথ্যপূরণ করতে পারবেন।

এবার ডান পাশের ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৪: অন্যান্য তথ্য পূরণ

এখানে আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, ধর্ম ও অন্যান্য তথ্য পূরণ করতে হবে। ফরমের লাল (*) চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা বাধ্যতামূলক। তাছাড়াও অন্যান্য তথ্যও পূরণ করতে পারেন। 

অ্যাকাউন্ট নিবন্ধনের সময় দেওয়া আপনার মোবাইল নম্বর এখানে ডিফল্টভাবে থাকবে। সকল তথ্য পূরণের পর উপরের ডানপাশে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৫: ঠিকানার তথ্য প্রদান

নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে, আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দিতে হবে। তাছাড়া আপনি যে এলাকায় ভোটার হতে চান তা নির্বাচন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন হলে যে ঠিকানায় ভোটার হতে চাচ্ছেন তা সিলেক্ট করতে হবে। পরবর্তীতে আপনার নির্বাচিত স্থানেই ভোট দিতে পারবেন। 

(১) বর্তমান ঠিকানার তথ্য 

আপনি বর্তমানে যেই এলাকায় অবস্থানরত আছেন তার তথ্য পূরণ করুন।

বর্তমান ঠিকানার তথ্য অপশনে আপনার বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও অন্যান্য সকল তথ্য পূরণ করুন।

(২) স্থায়ী ঠিকানার তথ্য

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে, বর্তমান ঠিকানার মতোই আপনার স্থায়ী ঠিকানার তথ্য পূরণ করুন। 

বর্তমান ঠিকানায় ভোটার হতে চাইলে, উপরের ‘এই ঠিকানায় ভোটার’ অপশনের পাশে থাকা চেকবক্সে ক্লিক করুন। তারপর ‘ভোটার এরিয়া সিলেক্ট করুন’। তবে স্থায়ী ঠিকানায় ভোটার হওয়া সর্বোত্তম।

এবার ‘পরবর্তী’ অপশনে যান। 

ধাপ ৬: কাগজপত্র সংযুক্ত করুন

সাধারণত বর্তমানে অনলাইনে ভোটার আবেদন করার জন্য কোন কাগজপত্র আপলোড করতে হয়না। এখান থেকে ‘সাবমিট’ অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।

ধাপ ৭: তথ্য সাবমিট করে আবেদন নিশ্চিত করুন

সর্বশেষ এই ধাপে আবেদন নিশ্চিত করে সাবমিট করুন। ফাইনাল সাবমিশনের পূর্বে, আপনার প্রদানকৃত কোন তথ্য ভুল মনে হলে, ‘পেছনে’ বাটনে ক্লিক করে তা এডিট করুন। সবকিছু ঠিক থাকলে পুনরায় সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। 

ব্যাস, আপনার নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার আবেদন সম্পন্ন হয়েছে। 

ধাপ ৮: নতুন ভোটার আবেদন কপি ডাউনলোড

নতুন ভোটার হবার অনলাইন আবেদন সাবমিট হলে, একটি সামারি পেজ বা ভোটার আবেদন কপি দেখতে পাবেন। নিচের ডাউনলোড করার অপশন থেকে ভোটার আবেদন কপিটি ডাউনলোড করুন। অথবা পরবর্তীতে ওয়েবসাইটে লগইন করে ড্যাশবোর্ড থেকেও ডাউনলোড করতে পারবেন। 

আবেদন কপিটি প্রিন্ট করে প্রিন্ট কপি সহ অন্যান্য ডকুমেন্টস উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিন। আপনার এসকল তথ্য নির্বাচন অফিস থেকে যাচাই করে, সবকিছু ঠিক থাকলে বায়োমেট্রিকের জন্য ডাকা হবে।

ধাপ ৯: উপজেলা নির্বাচন অফিসে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান 

অনলাইন আবেদনের সময় দেওয়া আপনার মোবাইল নাম্বারে মেসেজের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচন অফিসে ডাকা হবে। সেখানে বায়োমেট্রিক তথ্য হিসেবে আবেদনকারীর-

  • ছবি, 
  • ফিঙ্গারপ্রিন্ট,
  • আই স্ক্যান করা হবে।

তারপর নির্বাচন হাইকমিশনে সকল তথ্য প্রেরণ করা হবে। আবেদনের ১৫ দিনের মধ্যে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।

নতুন ভোটার হলে, আরও পড়তে পারেনঃ ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করুন নিজেই

নির্বাচন কমিশন অফিসে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন

অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণের ঝামেলা এড়াতে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে পারেন। সেজন্য নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হয়ে ‘ভোটার নিবন্ধন ফরম ২’ সংগ্রহ করুন। তারপর তো সঠিকভাবে পূরণ করে অন্যান্য কাগজপত্র সংযুক্ত করে আবেদন জমা দিন। 

তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর কর্তৃপক্ষ আপনাকে বায়োমেট্রিকের জন্য ডাকবেন।

ভোটার আইডি কার্ড পেতে কতদিন লাগে

সাধারণত নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়মে ১৫-২০ দিনের মধ্যেই আপনার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন।

সঠিকভাবে আবেদন দাখিল ও বায়োমেট্রিক প্রদানের পর উপজেলা নির্বাচন অফিসার অনুমোদন দেয়। তারপর তা Higher Authority – তবে পাঠানো হয়। সেই তথ্য বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে আপলোড করা হয়। এর জন্য সাধারণত ৫-৭ কার্যদিবস সময় লাগে। কাজ সম্পন্ন হলে আপনার মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে NID Number জানানো হবে। 

শেষকথা 

উপরোক্ত আলোচনার নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম অনুসরণ করে আপনি নিজেই নতুন ভোটার নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন। আইডি কার্ড করার সময় অবশ্যই উপযুক্ত ও সঠিক তথ্য দিতে হবে। এভাবে বিনা খরচে অনলাইনেই ভোটার হওয়া যাবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *